উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পড়তে যাওয়ার পূর্নাঙ্গ প্রস্তুতি

  • Post comments:0 Comments

উন্নত জীবনযাত্রা এবং শিক্ষার উন্নত মানের জন্য বেশিরভাগ স্টুডেন্টদের স্বপ্ন থাকে বিদেশে পড়াশোনা করতে যাওয়ার। কিন্তু বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ভালো রেজাল্ট থাকা সত্ত্বেও সঠিক তথ্য বা গাইডলাইনের অভাবে সে স্বপ্নটাও স্বপ্ন রয়ে যায়।

 

যদি আপনার একান্তই ইচ্ছে থাকে বিদেশে পড়াশোনা করার, তবে পড়তে যাওয়ার অন্তত আগে থেকেই সেই পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। কেননা, আমাদের আর্থিক অবস্থার উপর বিবেচনা করে বুঝে শুনে আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

 

নিম্নে বিদেশে পড়াশোনার জন্য যে যে প্রস্তুতি নিতে হবে তা বর্ননা করা হলো:

 

১. লক্ষ্য নির্ধারণ: আমরা বেশিরভাগ সময় অন্যকে অনুকরণ করে আমাদের জীবনের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকি। যেমন: আমার অমুক ফ্রেন্ড বিদেশে পড়তে যাচ্ছে আমিও যাবো। জীবনের সব সিদ্ধান্তের মত এই সিদ্ধান্তটাও অন্যকে অনুকরণ করে করা যায়না। কেননা, এটি জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত। তাই অনেক ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্তটিতে নিতে হবে। আপনার বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অর্থ, পরিবারের সম্মতি এই বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত।

 

২. ভালো ফলাফল: বিদেশে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আপনি যদি রানিং স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন তাহলে চেষ্টা করবেন যথাসম্ভব ভালো ফলাফল অর্জন করার। যদিও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলাফল খুব একটা প্রয়োজন হয়না, তবুও স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য আপনার রেজাল্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আপনি যে প্রোগ্রাম বা কোর্সের জন্যই বিদেশে যান না কেন, আপনার রেজাল্ট যত ভালো হবে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আপনার ভর্তি এবং স্কলারশিপের সুযোগ তত বেশি হবে।

 

৩. এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস: আপনার যদি কোনো এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস থাকে এটি আপনাকে অন্যান্য স্টুডেন্টদের থেকে অনেকটুকু এগিয়ে রাখবে। কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেই নয় স্কলারশিপ এবং পিআর বা সিটিজেনশিপ পেতেও এগুলো আপনাকে সাহায্য করবে।

 

৪. ভাষাগত দক্ষতা: বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি দরকার হবে সেটি হচ্ছে ভাষাগত দক্ষতা। আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হয়ে উঠতে হবে। পাশাপাশি যে দেশে পড়াশোনা করতে যাবেন সে দেশের ভাষা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। এটি আপনাকে সে দেশের মানুষের সাথে মিশতে সাহায্য করবে।

 

বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য IELTS বা TOEFL এ ভালো ফলাফল করতে হবে। IELTS এ কমপক্ষে 6.5 স্কোর করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে চাইলে GRE বা GMAT করতে হবে। যারা ইন্জিনিয়ারিং অনুষদে স্নাতকোত্তর করার পরিকল্পনা করছেন তাদেরকে GRE এবং যারা মানবিক ও ব্যবসা শিক্ষা নিয়ে পড়াশোনা করতে যাবেন তাদেরকে GMAT করতে হবে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে সাধারণত এর প্রয়োজন পড়েনা। GRE বা GMAT এর মেয়াদ থাকে ৫বছর।

 

যারা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর বিদেশে পড়াশোনা করতে যাবেন, কিংবা বিদেশে কোনো কলেজে ভর্তি হবেন তাদেরকে অবশ্যই SAT (Scholarship Aptitude Test) দিতে হবে।

 

বিদেশে পড়াশোনার জন্য যেকোনো ভাষাগত দক্ষতার সনদ বা সার্টিফিকেটকে সত্যায়িত করে রাখতে হবে।

 

কোর্স নির্ধারণ: কোর্স নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার ইচ্ছে কিংবা প্যাশনের উপর। আপনার যেই সাবজেক্ট ভালোলাগে সেই বিষয়টির নিয়ে পড়াশোনা করলে আপনার কাছে পড়াশোনাটাকে উপভোগ্য মনে হবে।

 

এছাড়া, আপনি আপনার ক্যারিয়ার টাকে কোন দিকে নিতে চান সে বিষয়ের উপরও আপনার সাবজেক্ট চয়েজ নির্ভর করে। আপনি যদি চাকুরি করতে চান তাহলে যে ফিল্ডে চাকুরি করতে চান সে বিষয়ের উপর পড়াশোনা করতে পারেন। যেমন: আপনি যদি সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার হতে চান সেক্ষেত্রে আপনি CSE, সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে পারেন। আবার আপনি যদি ব্যাংকে চাকুরী করতে চান সেক্ষেত্রে একাউন্টিং বা ফাইনান্স নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন।

আর আপনি যদি ব্যবসা করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি বিজনেস সেক্টরের টপিকগুলো কিংবা এন্ট্রপ্রেনারশিপের উপর পড়াশোনা করতে পারেন।

 

আমরা যেহেতু বাংলাদেশী স্টুডেন্ট, সুতরাং পরিবারের যে বিশাল একটা ভুমিকা থাকে সাবজেক্ট সিলেকশনের ক্ষেত্রে সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আপনার বাবা-মায়ের ইচ্ছের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সাবজেক্ট নির্বাচন করতে পারেন।

 

অনেকসময় আমরা বন্ধুবান্ধবের ইনফ্লুয়েন্সে সাবজেক্ট সিলেক্ট করি। এমন অনেকসময় হয়ে থাকে, “আমার বন্ধুরা এই সকবজেক্টে পড়াশোনা করছে এবং আমি পড়াশোনা করলে আমি ওর থেকে সাহায্য পেতে পারি” এর উপর ভিত্তি করে অনেকসময় সাবজেক্ট চয়েজ করা হয়ে থাকে।

 

এছাড়াও সাবজেক্ট চয়েজের ক্ষেত্রে কোন সাবজেক্টের চাহিদা বেশি, আমি যেই বিষয়ে পড়বো সেটি দেশীয় চাকরি বাজারে ভালো হবে কি না, কী পড়লে সহজেই পেশাগত উন্নতি ও লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব, আপনি যেই দেশে পড়তে যেতে আগ্রহী সেই দেশে আপনার পছন্দের বিষয়ে উচ্চশিক্ষার মান বা পদ্ধতি বিশ্বে কতটুকু গ্রহণযোগ্য বা কতটুকু সময়োপযোগী, ভবিষ্যতের পেশাগত জীবন কেমন হবে এই বিষয়টি নিয়ে পড়লে, এই বিষয়ে পড়াশোনা শেষে কোথায় কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলা যাবে, সেখানকার সুযোগ-সুবিধা, সম্ভাবনা ও অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতার মাত্রা কতটুকু আছে, আপনার বর্তমান যোগ্যতার সাপেক্ষে কোন কোর্সটি আপনার জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী, এই কোর্সের কোনো বিকল্প কোর্স আছে কি না, কোর্সটির মেয়াদ ও টিউশন ফি কত, মূলত এসব বিষয় গুলো নিয়ে ভেবে চিন্তে সাবজেক্ট পছন্দ  করতে হবে।

 

তাছাড়া সাবজেক্ট সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে পরামর্শের জন্য আপনি উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্য ও পরামর্শকেন্দ্রের সঙ্গে অথবা ওই কোর্সে পড়াশোনা করেছেন বা করছেন এমন কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরিচয় থাকলে আগে থেকেই আলাপ করে নিতে পারেন। কিংবা অনলাইনে সাবজেক্টের রিভিউ চেক করে নিতে পারেন।  এতে বিষয় সিলেক্ট করতে আপনার জন্য সুবিধা হবে।

 

দেশ সিলেকশন: বিদেশে পড়াশোনার জন্য দেশ সিলেকশন করাটা খুবই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কোন দেশে পড়াশোনার জন্য যাবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনাকে আগে জানতে হবে কোন দেশগুলো উচ্চশিক্ষার মানের দিক থেকে এগিয়ে আছে। যেমন: বর্তমানে শিক্ষার গুণগত মান বিচারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়া, জাপান এগিয়ে আছে।

 

এরপর আপনাকে ভাবতে হবে কোন দেশের পড়াশোনার ধরণটা কেমন। কোনটি আপনার সাথে বেশি suitable. আপনি যে দেশে পড়তে যেতে চাচ্ছেন সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি কেমন, থাকা-খাওয়ার খরচটা আপনি বহন করতে পারবেন কি না। কারণ একেকটা দেশে একেক ধরণের খরচ বহন করতে হবে। আপনার বাজেট, আগ্রহ ও যোগ্যতার সাথে সব দিক থেকে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে দেশটি মনে হবে আপনাকে সেটিকেই বেছে নিতে হবে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় সিলেকশন: আমরা কোন দেশে কিংবা কোন বিষয়ে পড়তে চাই সে সম্পর্কে মোটামুটি প্লান করা হয়ে গেলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আবেদন করা শুরু করতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে র্যাংকিংটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। উন্নত দেশগুলোতে যেমন উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি পেছনের সারির ইউনিভার্সিটিগুলো রয়েছে, তেমনি তুলনামূলকভাবে একটু কম উন্নত দেশগুলোতেও প্রথম সারির ইউনিভার্সিটি আছে। সেজন্য আপনি র্যাংকিং এ এগিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সিলেক্ট করার চেষ্টা করবেন।

 

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি বিভিন্ন রকম থাকে। আপনার বাজেট অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আপনাকে সিলেক্ট করা উচিত।

 

অনেকের স্কলারশিপের প্লান থাকে। তাদের সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করা উচিত। অনেকদেশে ফুল ফ্রি স্কলারশিপের ব্যবস্থা প্রচলিত নেই। তাই শিক্ষার গুণগত মান, পরিবেশ, বৈশ্বিক র‍্যাংকিং, টিউশন ফি, বৃত্তি সুবিধা, কোর্সের মেয়াদ, পার্ট-টাইম চাকরির সুযোগ, নাগরিকত্ব, জীবনমান, আবাসন ব্যবস্থা, বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আবহাওয়া ইত্যাদি বিষয় পর্যবেক্ষণ করেই আপনাকে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট থেকে ধারণা নিয়ে নেওয়ার।

 

একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক সময়ে সেশন শুরু হয়, তাই তাদের ভর্তি শুরুর সময় মনে রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ওয়েবসাইটে ঢু মারতে হবে প্রতিনিয়ত। আমাদের যদি স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনার ইচ্ছে থাকে সেক্ষেত্রে যেসকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্কলারশিপ প্রদান করা হয় সেগুলোতে আমাদেরকে এপ্লাই করতে হবে।

 

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করার ক্ষেত্রে যেকোনো একটা দেশে আবেদন না করে একাধিক দেশের ৪-৫টা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলে ভালো ফলাফল পাওয়ার সুযোগ বেশি।

 

আবেদন প্রত্রিয়া:  বিশ্ববিদ্যালয় সিলেকশন শেষ হয়ে গেলে অনলাইনের মাধ্যমে সেগুলোতে আবেদন করতে হবে। বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ভর্তি ফর্ম বা আবেদন প্রক্রিয়া বর্ণনা করা থাকে, আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রথমে ভর্তি তথ্য, প্রসপেক্টাস ও ভর্তি ফরম চেয়ে আবেদন করতে হয়। আবেদন পত্র ইমেইলের মাধ্যমে,  কিংবা ফ্যাক্স বা কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো যায়। আবেদনপত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠালে উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তির আবেদন ফর্ম এবং প্রসপ্রেক্টাস পাঠানো হয়। এই কার্যক্রম সম্পন্ন হতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগে।  আবার কখনো কখনো ই-মেইল এড্রেস দেওয়া থাকলে সেখানে তারা আবেদন ফর্ম পাঠাতে পারে। ফর্ম পাঠানো হলে সেই ফাইলটিকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করতে হবে।

 

আবেদন ফর্মটিকে প্রথমে ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে। এরপর ধৈর্য সহকারে পূরণ করতে হবে। এরপর প্রসপেক্টাসের নির্দেশনা অনুসারে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র এবং আবেদন ফি ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে কুরিয়ার সার্ভিস বা রাষ্ট্রীয় ডাকের মাধ্যমে নির্দেশিত ঠিকানায় পাঠাতে হবে।

 

পড়াশোনার সনদপত্র সহ বেশিরভাগ কাগজপত্র স্ক্যান করে তুলে দিতে হয়। আবার কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কাগজপত্র ফটোকপি কুরিয়ার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিকানায় পাঠাতে হতে পারে।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য যে আবেদন ফি প্রদান করা হয় তা অফেরত যোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো তথ্য মিথ্যে বা অসত্য মনে হলে সেক্ষেত্রে অনিশ্চিত বা পরবর্তীতে বাতিলের সম্ভাবনা থাকে। সেক্ষেত্রে ভিসা পেতেও সমস্যা হতে পারে।

 

ভর্তি ফর্মটি এজন্য সাবধানতার সহিত পূরণ করতে হবে। কোনো প্রকার কাটাকাটি করা যাবে না। ভালো হয়, যদি ফর্মটি ফটোকপি করে নিয়ে আগে ফটোকপিটি পূরণ করা হয়। এরপর সেটি দেখে মূল কপিটি পূরণ করলে নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

 

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হলে ভিসা আবেদনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সময় আপনি কি হোস্টেলে থাকতে চান কি না কিংবা স্কলারশিপ নিতে চান কি না এটি উল্লেখ করতে ভুলবেন না।

অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিস্টারের ফি অগ্রিম পরিশোধ করতে হয়।

 

আবেদন ফি ব্যাংক ড্রাফট: বিভিন্ন দেশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় অনুসারে আবেদন ফি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যে টাকাটি আবেদন ফি হবে সেটি ব্যাংক ড্রাফট করতে হবে।

 

স্বাস্থ্য বীমা: অনেক দেশে পড়তে গেলে স্বাস্থ্য বীমা করতে হয়। বাংলাদেশের অনেক বীমা এজেন্সি এটি নিয়ে কাজ করে থাকে। যে দেশে পড়তে যাবেন সাধারণত সেসব দেশের ওয়েবসাইট গুলোতে এ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়।

 

আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র: বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়। কেউ যদি আপনি বিদেশে পড়াশোনাকালীন যাবতীয় খরচ বহন করেন তবে তার অঙ্গীকারপত্র, আর্থিক সামর্থের প্রমানস্বরূপ ব্যাংক গ্যারান্টিপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে।

 

নিজ খরচে পড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থের প্রমানস্বরূপ স্পন্সরের নামে দেশভেদে বিভিন্ন অংকের অর্থের ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেটের কপি আপনাকে পাঠাতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে এ সলভেন্সি সার্টিফিকেট এর বৈধতা প্রমাণ করার জন্য বিগত ৬ মাসের ব্যাংক লেনদেন রিপোর্টের সত্যায়িত কপি পাঠাতে হয়।

এটি মূলত আপনি বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করবেন এবং পড়াশোনার খরচ প্রদানে আপনি সামর্থ্যবান এটি প্রমাণ করার জন্য পাঠাতে হয়।

 

ভিসা: বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়ে গেলে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসার জন্য আবেদন করার সময় সব কাগজপত্রের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির অফার লেটারটিও বাধ্যতামূলকভাবে দিতে হবে।

ভিসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণপত্র। প্রায় সব দেশেই স্টুডেন্ট ভিসার জন্য এপ্লাই করতে গেলে এটি দেখাতে হয়। এটি মূলত তারা দেখতে চান যে শিক্ষার্থীটি তার পড়াশোনা ও থাকা খাওয়ার খরচ প্রদানে সক্ষম কি না। মোটামুটি একবছরের টিউশন ফি ব্যাংক একাউন্টে রাখতে হবে। এর সাথে শিক্ষার্থীর আসা যাওয়া, যাতায়াত, খাবার, হাতখরচের জন্য ১০/১৫ লাখ টাকা বেশি রাখতে হবে।

 

প্লেন টিকেট: ভর্তির প্রক্রিয়া, পাসপোর্ট এবং ভিসা সবকিছু সম্পন্ন হয়ে গেলে বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনি কোন বিমানযোগে বিদেশে যাবেন সে বিষয়ে আপনাকে রিসার্চ করতে হবে। আপনার জন্য যেই বিমানটি সুইটেবল মনে হবে সেটির জন্য টিকেট করবেন। নিজে টিকেট করতে না পারলে কিছু এজেন্সি এই বিষয়ে সাহায্য করে, সেখান থেকে সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন।

 

কিছু কিছু এয়ারলাইন্স স্টুডেন্টদের জন্য অনেক ধরণের সুযোগ সুবিধা প্রদান করে থাকে। অনেক এয়ারলাইন্স স্টুডেন্টদের ডিসকাউন্ট রেটে টিকিট দিয়ে থাকে। এছাড়া যদি আপনি নির্ধারিত সময়ের বেশ অনেকদিন আগে টিকেট করে থাকেন সেক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট পেতে পারেন। সবসময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ভিসার ডেডলাইন যাই থাকুক সবসময় নির্দিষ্ট সময়ের ৪-৫দিন আগে রওনা দেওয়া ভালো। কারণ সেখানে গিয়ে আপনার সবকিছু গুছিয়ে নিতে, আশেপাশের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়। এছাড়া আবহাওয়া জনিত বা অন্য কোনো কারণে যাত্রাপথে দেরি হতে পারে। সেজন্য হাতে সময় না থাকলে আপনি বিপদে পড়ে যেতে পারেন। এজন্য কিছুদিন আগে রওনা দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

 

ব্যাগ প্যাকিং: বিদেশে যাওয়ার আগে আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ব্যাগ গুছাতে হবে। সাধারণত বাজারে অনেক ধরণের লাগেজ পাওয়া যায়, সেখান থেকে মোটামুটি টেকসই ধরণের লাগেজ আপনাকে কিনতে হবে। যেহেতু খুব সহজে দেশে আসা যাবেনা তাই বেশি করে কাপড় চোপড় কিনে নিতে হবে। শীতপ্রধান দেশ হলে অধিক পরিমাণে শীতের পোশাক নিতে হবে।

 

আপনি যে দেশে পড়তে যাচ্ছেন সে দেশে যে সকল জিনিসগুলো দুর্লভ সেগুলো সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন। যেমন: চীন, জাপান এ সকল দেশের মানুষেরা খুব একটা মশলা জাতীয় খাবার খায়না। সেক্ষেত্রে আপনি সাথে করে মশলা নিয়ে যেতে পারেন।

 

যে সকল জিনিসের দাম খুব বেশি সেগুলো আপনারা সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন।

 

তবে খেয়াল রাখবেন, নির্দিষ্ট ওজন যেনো অতিক্রম না করা হয়।

 

কোভিড ভ্যাকসিন সনদ: অনেক দেশে ইমিগ্রেশনের সময় আপনি করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন কি না সেটি চেক করা হয়৷ আপনাকে বিদেশে আসার আগেই করোনা সহ বিভিন্ন রোগ যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জা, জন্ডিস এগুলোর ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং করোনার ভ্যাকসিনের সনদপত্র বিদেশ ভ্রমণের সময় আপনার সাথে রাখতে হবে।

 

শেষ সময়ের প্রস্তুতি: বিদেশে যাওয়ার আগে সবকিছু ঠিকভাবে গোছানো হয়েছে কি না, কাগজপত্র ঠিকভাবে নেওয়া হয়েছে কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

 

বিদেশ যাওয়ার কিছুদিন আগ থেকে খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যেনো আপনার কোনো ধরণের ওষুখ না হয়।

 

বিদেশে গিয়ে কোথায় উঠবেন, সেখানকার আবাসন ব্যবস্থা কেমন বা কোথায় হবে সে বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে।

 

বিদেশে যাওয়ার আগে যে দেশে যাবো সেদেশের আইনকানুন সম্পর্কে যথাযথ ধারণা গ্রহণ করতে হবে।

 

দেশের আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাত করে ফেলতে হবে। বিদেশে গিয়ে কি মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ করা যাবে সেটি তাদের জানিয়ে দিতে হবে।

 

সর্বোপরি, আপনি যে দেশে পড়তে যাচ্চেন সে দেশের ইতিহাস, রাজনীতি, আইনকানুন, রীতিনীতি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব জেনে যাওয়ার চেষ্টা করবেন, এটি আপনাকে সে দেশের মানুষের সাথে সহজে মিশতে সাহায্য করবে।

 

এরপর পালা উড়াল দেওয়ার:

দেশ ছাড়ার আগে এয়ারপোর্টে যাওয়ার নিয়মকানুন সম্পর্কে যথাযথ ধারণা নিয়ে নিবেন। আপনি কোন কোন জিনিস নিতে পারবেন কোন কোন জিনিস নিতে পারবেন না সে সম্পর্কে ধারণা আগে থেকে নিয়ে রাখবেন।

 

আপনি যেই এয়ারলাইন্সের টিকেট করেছেন সেখানে কত কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করা যাবে, কয়টা লাগেজ বহন করা যাবে সে সম্পর্কে যথাযথ ধারণা নিয়ে নিতে হবে।

 

এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় আপনার পাসপোর্ট, ভিসা সবকিছু ঠিকঠাক মত আছে কি না সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিদেশে ভ্রমণের সময় এগুলো সহ আরো যেসকল উল্লেখিত কাগজপত্র নিজের সাথে নিয়ে ভ্রমণ করতে হবে সেগুলো সাথে রাখতে হবে।

 

ইমিগ্রেশন: আপনার স্বপ্নের দেশে পৌছানোর পর সে দেশে ঢোকার অনুমতির জন্য আপনাকে ইমিগ্রেশন বোর্ড পার হতে হবে। যখন আপনি সে দেশের বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন, তখন আপনার সেদেশে আসার উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য অবস্থানের সময় কাল সম্পর্কে ইমিগ্রেশন অফিসার জিজ্ঞাসা করবেন। ইমিগ্রেশন অফিসার আপনার পাসপোর্ট, ভিসা, স্বাস্থ্য ও প্রতিষেধক সনদ ইত্যাদি পরীক্ষা করবেন। তারপর তারা ঐ দেশে ঢোকার জন্য আপনাকে অনুমতি দেবেন।

একেক দেশের নিয়ম অনুসারে ইমিগ্রেশনের আইনকানুন ও পদ্ধতি দ্রুত অথবা সময়সাপেক্ষ অথবা ক্লান্তিকর হতে পারে। এত দীর্ঘ জার্নি করার পর আপনার কাছে ইমিগ্রেশনের এই লেন্দি প্রসেসটি বিরক্তিকর লাগতে পারে। তবে যতটুকু সম্ভব ভদ্র এবং নম্রভাবে ইমিগ্রেশন অফিসারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করবেন। তাকে সকল তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন।

 

কাস্টমস: ইমিগ্রেশনের পর কাস্টমস অফিসারের সাথে আপনার কথা বলতে হবে। উনি মূলত আপনি যে সকল জিনিস সাথে বহন করছেন সে সম্পর্কে জানতে চাইবে। কখনো আপনাকে আপনি কি কি জিনিস বহন করছেন সে সম্পর্কে লিখতে হতে পারে।

ইমিগ্রেশনের মত এই সময়েও আপনাকে কষ্ট করে ধৈর্য্য সহকারে অফিসারকে সমস্ত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি আপনার ব্যাগ চেক করতে পারেন, তাকে যথাযথ সহযোগিতা করতে হবে। তার সাথে যথাসম্ভব নম্রতার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে।

 

সবগুলো ধাপ অতিক্রম হয়ে গেলে আপনি আপনার স্বপ্নের দেশে বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে পদার্পণ করবেন। এ যেনো এক নতুন জীবন, এক নতুন যাত্রা। এখান থেকে নতুন করে জীবনকে রঙিনভাবে সাজিয়ে তুলবেন। আপনার এই যাত্রাটা শুভ হোক।

Leave a Reply