বিদেশে পড়তে গেলে কি কি অসুবিধায় পড়তে হয়?

  • Post comments:0 Comments

নতুন একটা জায়গায়, নতুন একটি দেশে, একঝাঁক নতুন মানুষের মধ্যে পড়াশোনা করার কথাটি মাথায় আসলে একধরণের রোমাঞ্চকর অনুভূতির সৃষ্টি হয়। তাইতো, বেশিরভাগ মানুষেরই ইচ্ছে থাকে বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করার। তবে বিদেশে পড়াশোনা করার সুবিধা বেশি থাকলেও অসুবিধা যে সেই তা কিন্তু নয়। আজকে আমরা বিদেশে পড়তে গেলে যে যে অসুবিধায় পড়তে হয় সে সম্পর্কে আলোচনা করবো:

 

১. বিদেশে পড়তে যাওয়ার পর বেশিরভাগ মানুষেরই নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে একটু সমস্যা হয়। নতুন সংস্কৃতি, আবহাওয়া, পরিবেশ এগুলোর সাথে খাপ-খাওয়াতে একটু বেশি সময় লেগে যায়, কেননা এখানে পরিবার বা বন্ধুবান্ধবরা সাপোর্ট করার মত থাকেনা।

 

২. অনেকেই পরিবার-পরিজন ছাড়া থেকে অভ্যস্ত হোন না। তাদের কাছে বিদেশের জীবনটা খুবই কষ্টকর মনে হয়। কেননা, একেবারে পরিবার-পরিজনের সাথে দেখা সাক্ষাক করা ছাড়াই অনেকটুকু সময় কাটিয়ে দিতে হয়। পারিবারিক বড়সড় কোনো অনুষ্ঠান, কিংবা কারো মৃত্যুতে সামিল হওয়ারও সেরকম খুব একটা সুযোগ থাকেনা৷ এদিক থেকে চিন্তা করলে বিদেশের জীবনটা খুবই কষ্টকর।

 

৩. বিদেশের নতুন পরিবেশে কখনো কখনো আমাদের একাকীত্ব অনুভব হয়। হঠাৎ করে মায়ের হাতের রান্না, কিংবা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার কথা মনে হলে মন খারাপ হয়ে যেতে পারে। কখনো কখনো একা থাকতে থাকতে বিষন্নতা ঘিরে ধরতে পারে।

 

৪. বিদেশে পড়তে যাওয়ার পর প্রথমেই সহজে সবার সাথে মিশতে সমস্যা হয় কেবলমাত্র ভাষাগত পার্থক্যের কারণে। এজন্য বন্ধু হতে কিংবা মানুষের সাথে মিশতে একটু সময় লাগে।

 

৫. দেশ থেকে যখন কেউ বিদেশে পড়তে যায় বেশিরভাগ মানুষই খুব বেশি উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে পড়তে যায়। মুভি আর ইন্টারনেট দেখে আমাদের বিদেশের জীবনযাত্রা সম্পর্কে একধরণের মোহ তৈরি হয়। কিন্তু যেরকম দেখানো হয় বাস্তবতা সেরকম নাও হতে পারে।

 

৬. বিদেশের আইন খুবই কঠোর। আমাদের বাংলাদেশের মত ঘুষ কিংবা সেটেলমেন্ট সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য থাকেনা। সেজন্য বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে আইনকানুন সম্পর্কে জেনে সেভাবে লাইফস্টাইল মেইনটেইন করা উচিত।

 

৭. বিদেশে সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় পার্থক্য রয়েছে। সেক্ষেত্রে মানিয়ে নিতে সমস্যা হতে পারে।

 

৮. পারিবারিক শাসনের বাইরে গিয়ে বিদেশে পড়তে গেলে অনেকেই ভুল পথে পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে অনেক জায়গায় ড্রাগস, মদ এভেইলেবল থাকায় অনেকে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে পরবর্তীতে আর লেখাপড়া চালিয়ে যায়না। এতে ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যায়।

 

৯. বিদেশের পরিবেশে এডজাস্ট করতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় খাবার নিয়ে। কেননা আমাদের দেশের মত বিদেশে সবসময় মানুষ ভাত কিংবা তেল-মশলা খায়না। এক্ষেত্রে অনেকের ওজন কমে যায়। অনেকে খাদ্যাভাসের সাথে পেরে উঠতে না পেরে বিদেশ থেকে দেশে চলে আসে।

 

১০. প্রাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে গা ভাসিয়ে অনেকেরই চারিত্রিক সমস্যা দেখা দেয়।

 

১১. বিদেশে পড়াশোনার খরচ যোগানো সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এজন্য বেশিরভাগ স্টুডেন্টরা স্কলারশিপের চেষ্টা করে। অনেকেই স্কলারশিপ শুরুতে পেলেও পরবর্তীতে পায়না। অনেক ক্ষেত্রে যতটুকু খরচের আশা করা হয় তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণে খরচ করা হয়ে থাকে। যে কারণে আসলে বিদেশে পড়াটা কষ্টকর হয়ে যায়। অনেকে তো পুরো টিউশন ফি কমপ্লিট করতে না পেরে পড়াশোনা মাঝ পথে রেখে চলে আসে।

সেক্ষেত্রে পড়তে যাওয়ার আগে যেখানে পড়তে যাচ্ছেন সেখানকার খরচ সম্পর্কে যথাযথ ধারণা নিয়ে যাওয়া উচিত।

 

১২. অনেকে বিদেশে যাওয়ার সময় প্রতারকের পাল্লায় পড়ে। প্রতারক থেকে সাবধানে থাকতে হবে। যেকোনো এজেন্সিতে ভরসা না করে Alex Global Consultancy Farm থেকে সাহায্য নিতে পারেন।

 

১৩. বিদেশে আসা যাওয়ার খরচ যেহেতু বেশি হয়ে থাকে তাই পরিবারের খারাপ মুহুর্তে যেমন পাশে থাকা যায়না, ভালো মুহুর্ত গুলো একসাথে উপভোগ করা যায়না।

 

১৪. বিদেশে পড়াশোনার জন্য প্রায় সকল স্টুডেন্টদেরকে পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতে হয়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ ছেলে-মেয়ে এটিতে অভ্যস্ত থাকেনা। এতে অনেকের এডজাস্ট করতে কষ্ট হয়।

আবার অনেক স্টুডেন্টরা পার্টটাইম জব না পেয়ে হতাশায় ভোগে। আর্থিক চাপের কারণে তাদের পড়াশোনাতেো ব্যাঘাত ঘটে।

 

১৫. গুটিকয়েক দেশের মানুষ বহিরাগতদের খুব একটা পছন্দ করেনা। অনেক দেশের মানুষ আবার এশিয়ান কিংবা ব্লাক ইন্ডিয়ানদেরকে একটু ছোটো চোখে দেখে। অনেকসময় এ ধরণের দেশে পড়তে গেলে বুলিং এর স্বীকার হতে হয়। সেজন্য কোনো দেশে পড়তে যাওয়ার আগে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।

 

১৬. অনেকে বিদেশে পড়তে গেলে আর দেশে ফিরতে চায়না। ওখানে স্যাটেল হতে চায়। অনেকে বিদেশ থেকে দেশে এসে দেশের পরিবেশের সাথে আর নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেনা।

 

১৭. বিদেশের পড়াশোনার কারিকুলাম আপনার সাথে মিলবেনা এটাই স্বাভাবিক। তারা যথেষ্ঠ আপডেটেড। সেজন্য আপনার ক্লাসের লেকচার বুঝতে অসুবিধা হতে পারে।

 

১৮. বিদেশে পড়াশোনা করতে গেলে দেশের আপনার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে দূরত্ব চলে আসতে পারে।

 

১৯. বিদেশে পড়তে গিয়ে অনেকে অনেক বেশি টাকা খরচ করে ফেলে। যেটার জন্য তাদেরকে এবং তাদের পরিবারকে পরবর্তীতে অনেক বেশব হিমশিম খেতে হয়।

 

সত্যি বলতে বিদেশে পড়াশোনার সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধেও রয়েছে। এজন্য পড়তে যাওয়ার আগে আপনাকে ভাবতে হবে, আপনি এই পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে পারবেন কি না। কারণ সব মানুষ সবকিছু পারেনা। সবকিছু মিলিয়ে যদি মনে হয় আপনি পারবেন সেক্ষেত্রে আপনি বিদেশে পড়তে যেতে পারেন।

Leave a Reply