স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে গেলে কি কি কাগজপত্র লাগবে ?

  • Post comments:0 Comments

আপনি যেদিন থেকে বিদেশে পড়তে যাওয়ার কথা চিন্তা করবেন সেদিন থেকে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। কোনো সার্টিফিকেট যেমন: (এসএসসি, এইচএসসি, ব্যাচেলর) কিংবা কোনো কাগজপত্র যেমন: (এনআইডি, জন্মনিবন্ধন) যদি সংগ্রহ করা বাকি থাকলে সেগুলো করার চেষ্টা করবেন। কেননা স্কলারশিপ নিয়ে যদি আপনি বাহিরে পড়তে যেতে চান, সেক্ষেত্রে স্কলারশিপের জন্য খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হয়। সেক্ষেত্রে যদি আপনার সব কাগজপত্র হাতের কাছে না থাকে হয়তো কোনো এক অকল্পনীয় সুযোগ আপনার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

 

অনেকেই হয়তো জানেনই না, স্কলারশিপের জন্য বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আবেদন করতে কোন কোন কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। নিম্নে সেগুলো সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো:

 

  • পাসপোর্ট করা না থাকলে করে ফেলতে হবে। কেননা বাংলাদেশে পাসপোর্ট করতে ৩মাসের মত সময় লাগে।৫বছর এবং ১০বছর মেয়াদি পাসপোর্ট তৈরি করা যায়। ৫ বছর ও ১০ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্টের জন্য ফি ভিন্ন ভিন্ন হারে জমা দিতে হবে। ৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্ট ২ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৭,৫০০ টাকা। জরুরি পাসপোর্ট ৭ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৫,৫০০ টাকা এবং সাধারণ পাসপোর্ট ১৫ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৩,৫০০ টাকা। ১০ বছর মেয়াদি ৪৮ পাতার ই-পাসপোর্ট ১৫ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৫,০০০ টাকা। জরুরি পাসপোর্ট ৭ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৭,০০০ টাকা এবং অতি জরুরি পাসপোর্ট ২ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৯,০০০ টাকা। ৫ বছর মেয়াদি ৬৪ পাতার ‘সাধারণ পাসপোর্ট’ ১৫ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৫,৫০০ টাকা। জরুরি পাসপোর্ট’ ৭ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৭,৫০০ টাকা এবং অতি জরুরি পাসপোর্ট ২ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ১০,৫০০ টাকা। ১০ বছর মেয়াদি ৬৪ পাতার সাধারণ পাসপোর্ট ১৫ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৭,০০০ টাকা। ৬৪ পাতার ‘জরুরি পাসপোর্ট’ ৭ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ৯,০০০ টাকা। ৬৪ পাতার অতি জরুরি পাসপোর্ট ২ দিনে পেতে ফি দিতে হবে ১২,০০০ টাকা।ফি’র সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট জমা দিতে হবে। ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। ১৮ বছরের কম আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

 

  • আর যদি পাসপোর্ট করাই থাকে তবে সেক্ষেত্রে সেটির মেয়াদ আছে কি না কিংবা কতটুকু সময়সীমা আছে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ম্যাক্সিমাম ভিসার জন্য এপ্লাই করতে হলে পাসপোর্টের মেয়াদ তিন মাসের মত থাকতে হবে।

 

  • সব ধরণের পরীক্ষা মানে এসএসসি, এইচএসসি, ব্যাচেলর করা থাকলে সেটি সহ সকল একাডেমিক সার্টিফিকেট, মার্কশীট এবং একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট একসাথে সংরক্ষণে রাখতে হবে। সবগুলো সার্টিফিকেট ইংরেজিতে করে রাখতে হবে।

 

  • আপনার যদি কোনো ভাষাগত যোগ্যতা থাকে সেটির সার্টিফিকেটটিও সংরক্ষণে রাখতে হবে। এছাড়া IELTS, TOFELL, GRE, GMEAT পরীক্ষাগুলো না দিলে সেগুলো দিতে হবে এবং ভালো স্কোর অর্জন করতে হবে। এছাড়া যে দেশে পড়তে যাবেন সে দেশের ভাষা শিখে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

 

  • আপনি যদি কোনো ধরণের পুরষ্কার জিতে থাকেন, কোনো ধরণের ইন্টারন্যাশনাল ডিবেট কিংবা চ্যাম্পিওনশীপ প্রোগ্রামে এটেন্ড করে থাকলে সেগুলোর ডকুমেন্টও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলোকে একটি জায়গায় সংরক্ষণ করে রাখতে হবে৷ এই বিষয়গুলো আপনাকে স্কলারশিপ পেতে, বিদেশে সিটিজেনশিপ পেতে সাহায্য করবে।

 

  • এছাড়াও কোনো ধরণের এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিস, সমাজ-উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকলে সেগুলোর তথ্যও আপনার স্কলারশিপ, সিটিজেনশীপ এবং পিআর পাওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

 

  • এছাড়া স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে থাকলে স্কলারশিপের জন্য যে ফর্ম দেওয়া হয় সেটিকে পূরণ করে জমা দিতে হবে। এটা কখনো কখনো অনলাইনে পূরণ করে জমা দিতে হয় কখনো আবার হার্ডকপি জমা দিতে হয়। এজন্য আপনাকে স্কলারশিপ ফর্ম পাওয়ার সাথে সাথে সেটিকে পূরণ করে জমা দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এই ফর্মের সাথে যে যে কাগজপত্র গুলো চাওয়া হবে যেমন: জন্মনিবন্ধন, NID, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট এগুলো জমা দিতে হবে। কোনো কিছুর ফটোকপি জমা দিলে সেগুলোকে সত্যায়িত করে জমা দিতে হবে।

 

  • আপনার NID কার্ড এবং জন্মনিবন্ধন কার্ড রেডি রাখতে হবে। ইংরেজিতে করা না থাকলে ইংরেজিতে দিতে হবে।

 

  • একটি ভালো SOP Letter বা স্টেটমেন্ট অফ পারপাস লেটার আপনাকে স্কলারশিপের জন্য এগিয়ে রাখবে। আপনার লেটারটি যতটা সুন্দর ও আকর্ষণীয় হবে আপনার স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা ততটা বেড়ে যাবে। অনেকে এই লেটারটির কথা শুনলে ভয় পেয়ে যায়। এটি খুবই সাধারণ একটা জিনিস। আপনার নিজস্ব গল্পকেই SOP বলা হয়। আপনি কেনো এই সাবজেক্টে পড়তে চাচ্ছেন,  অভিজ্ঞতা কী, গ্র্যাজুয়েশন শেষে দেশে ফিরে এসে কী করবেন, কেনো অন্য কাউকে না নিয়ে কেনো তারা আপনাকেই নিবে এ বিষয়গুলো আপনাকে উল্লেখ করতে হবে। এই লেটারে আপনি মানুষ হিসেবে কেমন, উচ্চশিক্ষার চাপ সামলাতে আপনি কতটুকু প্রস্তুত আছেন, আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড, প্রতিভা, অভিজ্ঞতার বিষয়ে আপনাকে উল্লেখ করতে হবে। অনেকে নিজের সম্পর্কে অনেক মিথ্যে কথা লিখে, যেটা একেবারেই উচিত নয়। নিজের বিষয়ের সত্য বিষয়গুলো সুন্দর করে লিখে দিবেন। আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনাটিও এখানে উল্লেখ করবেন। এটি সবসময় নিজের মত করে লেখার চেষ্টা করবেন। ইন্টারনেট থেকে কপি করা থেকে বিরত থাকবেন। এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে যাদের সিজিপিএ ভালো না, IELTS স্কোরও বেশিনা কিন্তু কেবলমাত্র ভালোমানের SOP এর জন্য স্কলারশিপ পেয়ে গেছেন। সেজন্য এটি খুবই সাবধানতার সহিত নির্ভুলভাবে তৈরি করতে হবে।

 

  • স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য রিকমেন্ডেশন বেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রায় সব দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেই এই ফর্ম দেওয়া থাকে। তাই আপনি চাইলে এই ফর্মের পাশাপাশি নিজের লেখা পেপারও যুক্ত করতে পারবেন। বিদেশে পড়াশোনার জন্য আবেদন করার সময় তিনজন ব্যাক্তিদের কাছ থেকে রিকমন্ডেশন লেটার নিতে হয়। মূলত যারা আপনাকে ভালোভাবে চেনেন, জানেন এবং আপনার কাজ সম্পর্কে অবগত আছেন তারা এই বিষয়ে আপনাকে সহায়তা করতে পারবে। এইক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের বাহিরের থেকে রিকমান্ডেশন নেওয়া ভালো। এক্ষেত্রে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আপনি যদি কোনো কাজ করে থাকেন তাহলে কর্মক্ষেত্রের উর্ধ্বতন কারো থেকে লেটার সংগ্রহ করলে আপনার জন্য ভালো হবে।

 

  • বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে স্কলারশিপের আবেদন পত্রের সাথে একটি সিভি জমা দিতে হবে। আপনার ব্যক্তিগত এবং প্রয়োজনীয় সকল তথ্য আপনার সিভিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন। আপনার অভিজ্ঞতা বা স্কিলগুলো সিভিতে উল্লেখ করতে ভুলবেন না। যতটুকু সম্ভব আপডেট সিভিই দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

 

  • অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা পিতা-মাতার আর্থিক অবস্থার প্রমাণপত্র দেখতে চায়। সেক্ষেত্রে ব্যাংক স্টেটমেন্ট এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে।

 

  • আপনি শারীরিকভাবে ফিট আছেন কিনা তা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় জানতে চায়। সেটি যাচাইয়ের জন্য আপনাকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর আপনাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রমাণপত্র স্ক্যান করে পাঠাতে হবে।

 

  • আপনার নিজের যদি কোনো রিসার্চ পেপার থেকে থাকে তবে সেটি স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। আপনার পাবলিশড আর্টিকেলের লিংক এবং জার্নালের কপি বা লিংক আবেদর পত্রের সাথে দিতে পারেন। এতে আপনার স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যাবে।

 

বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য কোনো ভলেন্টিয়ারিং কাজের গুণাবলি কিংবা পূর্বে গবেষনাধর্মী কোনো কাজে যুক্ত থাকলে সেগুলোর অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া SOP (statement of purpose) এবং LOR (Letter of Recommendation) স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই খুবই সাধারণ মানের SOP এবং LOR জমা দিয়ে থাকেন। সব ধরণের বৃত্তি যেহেতু প্রতিযোগিতামূলক তাই হেলাফেলা করলে অনেকসময় বাদ পড়ে যেতে পারেন। সেজন্য খুবই সাবধানতার সাথে এগুলো লেখার চেষ্টা করবেন।

 

স্কলারশিপের জন্য কাগজপত্র রেডি করার পর আবেদন করতে হবে। যে দেশ/বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যেসব কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে সেগুলো আবেদন পত্রের সাথে জমা দিতে হবে। বৃত্তির জন্য আবেদন করা হলে অনেক ক্ষেত্রে সাক্ষাতকারের মুখোমুখি হতে হয়। কখনো কখনো অনলাইনে সাক্ষাতকার নেওয়া হয় আবার কখনো যে দেশে পড়তে যাবেন সে দেশের দূতাবাস থেকে সাক্ষাতকার নেওয়া হয়।

 

স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা হলেও কখনো কখনো ব্যাংকে নির্ধারিত পরিমাণের অর্থ জমা রাখতে হয়। বিভিন্ন ধরণের ব্যাংক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টদের জন্য স্টুডেন্ট ফাইল চালু করেন। অনেক স্টুডেন্টরা ফাইল ওপেন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। আবার অনেক ব্যাংক বর্তমানে স্টুডেন্ট ফাইল খোলার সুযোগ বন্ধ রেখেছে। এরকম কোনো সমস্যা হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে সমস্যার কথা উল্লেখ করে ইমেইল করতে হবে।

 

যেকোনো স্কলারশিপের আবেদন করার সময় শুরুর দিকে আবেদন করার চেষ্টা করবেন। শেষ দিকে আবেদন জমা দেওয়ার সময় নানা ধরণের জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। আবার শেষ দিকে অনেক বেশি আবেদনের চাপে অনেক ভালো আবেদন উপেক্ষার আশংকা থাকে। সেজন্য আগেভাগে আবেদন করার চেষ্টা করবেন।

Leave a Reply