বিদেশে পড়তে যাওয়ার সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে ভিসার জন্য এপ্লাই করা। ভিসা কি? ভিসা হচ্ছে মূলত এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য অনুমতিপত্র। একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মধ্যে আমরা একদেশ থেকে অন্য দেশে যেতে যেতে পারি, অবস্থান করতে পারি। আমরা যদি বৈধভাবে একদেশ থেকে অন্যদেশে থাকতে চাই তবে সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে অবশ্যই সেদেশের ভিসা থাকতে পারে।
বিদেশে পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এপ্লাই করার পর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কনফারমেশন লেটার আসার পর ভিসার জন্য আবেদন করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তাদের পাঠানো ডেডলাইনের মধ্যে আপনাকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। নতুবা, আপনার ভর্তি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পাওয়ার পরপরই আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। কখনো ভিসার জন্য আবেদনপত্রগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সংগ্রহ করে। তাছাড়া নির্ধারিত দেশের দূতাবাস থেকে ভিসার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া ভিসার Alex Global Consultancy ফার্মের মত অনেক স্টুডেন্ট কনসাল্টেন্সি এজেন্সিগুলো ভিসা প্রসেসিং এর কাজে সাহায্য করে থাকে। তবে, স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করলে, কাগজপত্র সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য খুব একটা সমস্যাতে পড়তে হয়না।
ভিসার জন্য যেসকল কাগজপত্র লাগে সেগুলো নিম্নে দেওয়া হলো:
১. ভিসার জন্য আবেদন করার জন্য সবার প্রথমে প্রয়োজন হবে পাসপোর্টের। আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬মাসের বেশি থাকতেই হবে। তবে ১বছর বা তার বেশি মেয়াদ থাকলে বেশি ভালো হয়। এবং পাসপোর্টের শেষ তিনটি পৃষ্ঠা খালি থাকতে হবে।
এজন্য যদি পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকে, কিংবা শেষের পৃষ্ঠাগুলো খালি না থাকে দ্রুত পাসপোর্টের মেয়াদ বাড়িয়ে ভিসার জন্য এপ্লাই করতে হবে। আপনার পূর্বের সকল পাসপোর্টগুলোও এক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে। পূর্বে পাসপোর্টগুলোর ব্যবহৃত পাতাগুলো ভিসার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। কেননা, আপনি যদি পূর্বে কোনো দেশে ভ্রমণে গিয়ে থাকেন, তবে আপনার পাসপোর্টে সে তথ্যগুলো থেকে যায়, এবং এটি পরবর্তীতে ভিসা পেতে সহযোগিতা করে। যদি ভিসার আবেদনপত্রটি নিজে পূরণ করেন তাহলে খেয়াল রাখবেন পাসপোর্ট নম্বরটি ঠিকমত বসানো হয়েছে কি না। পূর্বের পাসপোর্ট গুলো নতুন পাসপোর্টের সাথে থাকতে হবে। পূর্বের পাসপোর্ট যদি হারিয়ে যায় তাহলে হারিয়ে যাওয়া পাসপোর্টের জন্য থানায় জিডি করে সেই জিডির কপি সংযুক্ত করতে হবে। পাসপোর্টের প্রথম ৫পাতার ফটোকপি সাথে রাখবেন। এছাড়াও যে পাতাগুলোতে স্পষ্ট তথ্য দেওয়া আছে সেগুলোর ফটোকপি সাথে রাখতে হবে।
২. কোনো কোনো দেশে যাওয়ার জন্য হেলথ চেকআপের মেডিকেল সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। সেজন্য আপনি যে দেশে পড়াশোনার জন্য যাচ্ছেন সেদেশের নিয়মানুসারে আপনাকে মেডিকেল চেকআপ করাতে হবে। আপনি যে দেশে পড়তে যাবেন সেদেশের দূতাবাসের নির্ধারিত কিছু মেডিকেল সেন্টার আছে। সেখান থেকেই মূলত এই চেকআপটি করাতে হবে। মেডিকেল সার্টিফিকেটের রেজাল্ট পজেটিভ না থাকলে অনেকক্ষেত্রে ভিসার অনুমতি পাওয়া যায়না। সেক্ষেত্রে সাবধানতার সাথে আপনাকে মেডিকেল চেকআপ করাতে হবে। মেডিকেল চেকআপের পর মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
৩. সকল ধরণের শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র যেমন: টেস্টিমনিয়াল, মার্কশীট, সার্টিফিকেট সাথে রাখতে হবে। অরিজিনাল কপির সাথে কয়েক কপি ফটোকপি রাখা ভালো। আপনি পূর্বে যে সকল পড়াশোনা করেছেন যেমন: এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স এগুলোর সার্টিফিকেট, মার্কশীট, টেস্টিমনিয়ালগুলো একসাথে রাখার চেষ্টা করবেন। ভিসার জন্য এগুলো প্রয়োজন হবে।
৪. আপনার যদি এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার পর পড়াশোনায় গ্যাপ থাকে তবে সেটির যথাযথ কারণ উল্লেখ করতে হবে।
৫. আপনি যদি ক্রেডিট ট্রান্সফার করে বিদেশে পড়াশোনার জন্য যেতে থাকেন তবে সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
৬. কয়েক কপি ছবি। প্রিন্টেড এবং হার্ডকপি দুটোই সাথে রাখা ভালো। অনলাইনে আবেদন করলে সফটকপি লাগবে। ছবির সাইজ বিভিন্ন দেশের জন্য বিভিন্ন সাইজ প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে আগে থেকে রিসার্চ করে জেনে নিবেন আপনি যে দেশে যাবেন সে দেশে কোন সাইজের ছবি লাগবে সেটি জেনে নিবেন। ছবি তোলার সময় ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা রাখতে হবে। পরিষ্কার – পরিচ্ছন্ন এবং ফরমাল পোশাক পড়ে ছবি তোলার চেষ্টা করবেন। ছবি যেনো স্পষ্ট এবং ক্লিয়ার হয়। মেয়েদের মধ্যে যারা হিজাব পরিধান করে তারা চেষ্টা করবেন চোখ, নাক, কান, মুখ এগুলো যেনো স্পষ্ট বোঝা যায়। ৮/১০ কপি ছবি সংগ্রহে রাখার চেষ্টা করবেন।
৭. NID কার্ড এবং জন্মসনদের মূল কপি এবং ফটোকপি সাথে রাখার চেষ্টা করবেন। ভিসার জন্য আপনার জন্ম নিবন্ধন এবং এনআইডি কার্ডের জন্মতারিখ এক আছে কি না সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনো সমস্যা থাকলে সেটি আগে থেকে ঠিক করে রাখতে হবে।
৮. IELTS, GRE, GMAT, SAT সহ বিভিন্ন ভাষাগত দক্ষতা পরীক্ষার সার্টিফিকেট সাথে রাখতে হবে।
৯. আবাসন বা আপনি এই এলাকার স্থানীয় বা বর্তমান বাসিন্দা সেটি প্রমাণের জন্য ইউটিলিটি বিল যেমন: পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিলের কাগজ সাথে রাখতে হবে।
১০. আপনি যেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পেয়েছেন সেটি সাথে রাখতে ভুলবেন না কিন্তু। ভিসার এপ্লাই করার সময় সাধারণত আনকন্ডিশনাল অফার লেটারটাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আপনাকে যদি কোনো ধরণের শর্ত ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার দেওয়া হয় তবে সেটি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
১১. আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে জমা দিলে সেটির প্রমাণপত্রও সাথে রাখতে হবে।
১২. আপনার আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র বা ব্যাংক স্পন্সর লেটারের কপি সাথে রাখতে হবে। ব্যাংক স্পনসর লেটার বলতে মূলত বোঝায় বিদেশে পড়াশোনা করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকাপয়সা আপনার রয়েছে। এটি প্রমাণ করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো একটি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রমানপত্র হিসেবে ভিসা আবেদন করার সময় সাবমিট করতে হবে।
১৩. আপনি যদি স্পন্সর বা গ্যারান্টার নিয়ে থাকেন তবে স্পন্সর বা গ্যারান্টারের ফর্ম পূরণ করে রাখতে হবে। স্পন্সরের আয়ের উৎসের প্রমাণপত্র ডকুমেন্টস হিসেবে লাগবে। তাছাড়া স্পন্সর এর সাথে অনেকসময় সম্পর্কের প্রমাণপত্র দেখাতে হয়। সেক্ষেত্রে জন্মসনদ, এনআইডি বা অন্যান্য কাগজপত্র সংরক্ষণে রাখার চেষ্টা করবেন।
১২. ভিসা আবেদন জমাদানকারী সেন্টার ও টাকা জমা দানকারী সেন্টারের নাম যেনো এক থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
১৩. আপনি যদি পূর্বে কখনো সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করে থাকেন তবে সেখানকার রেকর্ড এবং ছাড়পত্র ভিসার জন্য আবেদনের সময় প্রয়োজন হবে।
১৪. কোনো কোনো দেশে পড়তে গেলে স্বাস্থ্য বীমাটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। বাংলাদেশের কয়েকটি এজেন্সি এটি করে থাকে। তাছাড়া এম্বাসি থেকেও এ বিষয়ে যথাযথ তথ্য পাওয়া যায়। আপনি যে দেশে পড়তে যাবেন সেখানের জন্য স্বাস্থ্য বীমা প্রয়োজন হলে আপনাকে অবশ্যই ভিসার জন্য আবেদন করার সময় স্বাস্থ্য বীমার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
১৬. আপনার স্টেটমেন্ট অফ পারপাস বা SOP লেটারের একটি কপি সাথে রাখতে পারেন।
১৫. বর্তমানে বেশিরভাগ দেশেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স লেটারটি চেয়ে থাকে। আপনি দেশে থাকতে কোনো ধরণের ক্রাইম করেছেন কি না কিংবা কোনো ধরণের অনৈতিক কাজের সাথে দেশে থাকতে জড়িত ছিলেন কি না, আপনার ক্যারিয়ার লাইফে কোনো ধরণের খারাপ কাজের অভিযোগ আছে কি না এসব বিষয়ে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হতে এই রিপোর্টটি চেয়ে থাকে।
এটি সংগ্রহ করার জন্য আপনার এলাকার থানায় যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখবেন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটটি যেনো ১বছরের বেশি পুরোনো না হয়।
১৬. আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন এবং স্পাউস সহ যদি আপনি বিদেশে যেতে চান কিংবা ভবিষ্যতে তাদের নিয়ে বিদেশে স্যাটেল হতে চান সেক্ষেত্রে আপনার স্বামী/স্ত্রীর সম্পর্কের প্রমাণ হিসেবে বিবাহ সনদ এবং বাচ্চা থেকে থাকলে তাদের জন্মনিবন্ধনও দিতে পারেন।
এছাড়া আপনি যদি ভিসার ফর্ম অনলাইনে পূরণ করে থাকেন তাহলে অনলাইনের কপি প্রিন্ট করে সাথে নিয়ে যেতে হবে। তাছাড়া উপরে যেসকল ডকুমেন্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ভিসার জন্য আবেদন করার সময় এগুলো সাথে রাখতে হবে। কেননা, অনেকসময় ডকুমেন্ট না থাকলে ভিসা রিফিউজ হয়ে যেতে পারে। ভিসার জন্য আবেদন করার সময় উল্লেখিত কাগজপত্র গুলোর মূলকপি এবং ১কপি ফটোকপি সাথে জমা দিতে হবে। মূলকপি সত্যতা যাচাইয়ের পর ফেরত দিয়ে দেওয়া হবে।