বিদেশে পড়াশোনা করার প্লান করার পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাবো। কোন বিশ্ববিদ্যালয়টি আমাদের জন্য ভালো হবে৷ বেশিরভাগ স্টুডেন্টরাই বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে কনফিউশানে থাকে। আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা এ বিষয়গুলো তুলে ধরবো:
১.সবার প্রথমে যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করার আগে লক্ষ্য করতে হবে সেখানে আপনার ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা আছে কি না।
২. বিশ্ববিদ্যালয় সিলেকশন করার সময় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে র্যাংকিং এর উপর। যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিং এ এগিয়ে আছে সে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সিলেক্ট করলে ভালো হবে। উন্নত দেশ হলেই যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিং এ এগিয়ে আছে বিষয়টা এমন নয়। অনেক অনুন্নত দেশে এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলো র্যাংকিং এ এগিয়ে আছে। পাশাপাশি উন্নত দেশেও র্যাংকিং এ এগিয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আপনি যদি পড়াশোনায় আগ্রহী এবং ভিশনারী হয়ে থাকেন, বাহিরের পড়াশোনার ডিগ্রিটা যদি আপনার ভবিষ্যত চাকুরিজীবনে এবং ক্যারিয়ারে ইফেক্ট ফেলে তবে আপনাকে অবশ্যই ভালো র্যাংকিং এর বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করতে হবে।
৩. আপনার মূল লক্ষ্য যদি ভালোভাবে পড়াশোনা করা না হয়ে টাকা উপার্জন করা কিংবা সিটিজেনশিপ পাওয়া মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আপনি মোটামুটি মানের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়াশোনা করতে পারেন। তবে শিক্ষার মান এবং আধুনিক জীবনযাত্রার মান যেখানে ভালো সেখানে পড়াশোনা করা উচিত।
৪. বিশ্ববিদ্যালয় সিলেকশনের ক্ষেত্রে টিউশন ফি এর দিকে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সবাইকে নিজ নিজ বাজেট এবং সামর্থ্য অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করা উচিত। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ সেমিস্টারের টিউশন ফি একসাথে দিলে কিছুটা কমিশন বা ছাড় পাওয়া যায়। সেরকম কোনো সুযোগ আছে কি না, কিংবা থাকলে আপনি সেটি এপ্লাই করতে পারেন।
৫. টিউশন ফি এর পর একোমান্ডেশন ফি এর দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ দুটো ফি মিলিয়ে আপনাকে যাচাই করতে হবে আপনি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন কি নক।
৬. আপনার যদি স্কলারশিপ নিয়ে পড়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে স্কলারশিপ প্রদান করে থাকে সেগুলোতে এপ্লাই করা উচিত। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ফুল ফ্রি স্কলারশিপ দিয়ে থাকে, আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপ দেয়না। সেক্ষেত্রে আপনার সেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করা উচিত।
৬. যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে সবার প্রথমে আমাদের মাথায় যেটা ঘুরে সেটি হচ্ছে কত টাকা লাগবে। খরচটা আমরা কুলাতে পারবো কি না। এক্ষেত্রে আপনি যে কোর্সে পড়তে যাবেন সেখানে মোট কত টাকা খরচ হবে এবং কীভাবে ফি পরিশোধ করতে হবে তা মাথায় রাখতে হবে। তাছাড়া আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-মেইল করলে তারা মোট খরচের একটি খসড়া হিসাব ও পরিশোধের পদ্ধতি জানিয়ে দেয়। মেইলে সাধারণত টিউশন ফি, আবাসন খরচ, খাবার খরচ, বইপত্র বাবদ খরচ, ইন্সুরেন্স খরচের একটা তালিকা দেওয়া হয়। সেখান থেকে আপনি ধারণা করতে পারবেন আপনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন কি না।
৭.বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে শিক্ষার গুণগত মান কেমন, সেখানকার পরিবেশ কেমন, আপনি সেখানে মানিয়ে নিতে পারবেন কি না সে বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিবেন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন।
৮. বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি স্টুডেন্টদের সংখ্যা কেমন, বিদেশি স্টুডেন্টদের জন্য কি ধরণের সুযোগ সুবিধা রয়েছে, ডরমিটরি বা হোস্টেল আছে কি না, খাবার কেমন, যাতায়াত ব্যবস্থা কেমন হবে এ সব বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে মাথায় রাখা উচিত।
৯. বিদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্টুডেন্টদের পার্টটাইম কাজের সুযোগ থাকেনা। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ নিজেরাই স্টুডেন্টদের পার্টটাইম চাকুরির ব্যবস্থা করে থাকে। আপনার যদি পার্টটাইম চাকুরি করার ইচ্ছে থাকে তাহলে এই বিষয় গুলো বিবেচনায় রাখতে পারেন।
১০. আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কোথায় সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শহর থেকে কাছে নাকি দূরে, দূরে হলে কতটুকু দূরে, সেখানে থাকার ব্যবস্থা আছে কি না, বাজার, হসপিটাল আসে পাশে আছে কি না সেটির দিকে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
একেক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেক সময়ে সেশন শুরু হয়, তাই তাদের ভর্তি শুরুর সময় মনে রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ওয়েবসাইটে ঢু মারতে হবে প্রতিনিয়ত।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করার ক্ষেত্রে যেকোনো একটা দেশে আবেদন না করে একাধিক দেশের ৪-৫টা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করলে ভালো ফলাফল পাওয়ার সুযোগ বেশি।